আজ রবিবার, ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ২৯শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

পাবনায় মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মদিন উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক: 

বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়িকা পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেনের ৮৯তম জন্মদিন আজ। এ দিনটি ঘিরে তার জন্মস্থান পাবনায় নানা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। পাবনা জেলা প্রশাসন, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠন র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সুচিত্রা সেন অভিনীত চলচ্চিত্র প্রদর্শনের আয়োজন করেছে। সুচিত্রার জন্মদিনকে ঘিরে পাবনায় উৎসব আমেজ এবং সাজসাজ রব বিরাজ করছে।

পাবনার জেলা প্রশাসক মো. জসিম উদ্দিন বলেন, উপমহাদেশের বাংলা চলচ্চিত্রের কালজয়ী নায়িকা পাবনার মেয়ে সুচিত্রা সেনের ৮৮তম জন্মদিন উপলক্ষে তার জন্মস্থান পাবনায় জেলা প্রশাসন ও সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের যৌথ উদ্যোগে সকাল ১০টায় র‌্যালি হয়, পরে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা, সুচিত্রা সেন অভিনীত চলচ্চিত্র প্রদর্শনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিকেল ৩টায় পাবনা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পুরস্কার বিতরণী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ সভাপতি পাবনা জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু  বলেন, মহানায়িকার জন্মদিনে সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে কেক কাটাসহ নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া পাবনা ড্রামা সার্কেল, পাবনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, টাউন গার্লস হাইস্কুলেও কেক কাটাসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জন্মদিন পালন করছে।

প্রসঙ্গত সুচিত্রা সেন ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনার তৎকালীন সিরাজগঞ্জ মহুকুমার ভাঙাবাড়ি গ্রামে নানীর বাড়িতে তার জন্ম। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ও মা ইন্দিরা দেবী। বাবা ছিলেন পাবনার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে রমা তৃতীয়। পাবনার ওই বাড়িতেই রমার শৈশব ও কৈশোরের অনেকটা সময় কেটেছে। তিনি পড়তেন পাবনা টাউন গার্লস স্কুলে। দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন রমা পরিবারের সঙ্গে ভারতে পাড়ি জমান।

দিবানাথ সেনের সঙ্গে বিয়ের সুবাদে রমা দাশগুপ্তা হয়ে যান রমা সেন। তখন তারা থাকতেন বালিগঞ্জে। রমার শ্বশুরের প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ভাই বিমল রায়। তিনিই প্রথম রমাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু শ্বশুর আদিণাথ সেনের অনমুতি ছাড়া অভিনয়ে আসা সম্ভব ছিল না। রমা নিজ থেকেই একদিন শ্বশুরকে নিজের ইচ্ছার কথা জানালেন। শ্বশুরও মত দিলেন। আর বাংলা সিনেমা আজীবনের জন্য ঋণী হয়ে থাকলো অদিণাথ সেনের কাছে। শ্বশুরের মত পেয়ে রমা যাত্রা শুরু করেন স্টুডিও পাড়ায়। সিনেমায় এসে রমা সেন হয়ে গেলেন সুচিত্রা সেন। ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবির পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তের সহকারী নীতিশ রায় রমার নাম দেন সুচিত্রা। ১৯৫৩ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সাত নম্বর কয়েদি’ তার প্রথম ছবি। তবে সুচিত্রা সেন প্রথম অভিনয় করেন ১৯৫২ সালে বীরেশ্বর বসুর ‘শেষ কোথায়’ চলচ্চিত্রে। বিভিন্ন জটিলতার কারণে ছবিটি তখন মুক্তি পায়নি। এর প্রায় ২২ বছর পর ১৯৭৪ সালের ২৫ জানুয়ারি ‘শ্রাবণ সন্ধ্যা’ নামে ছবিটি মুক্তি পায়। ততদিনে সুচিত্রা সেন বাংলা চলচ্চিত্রে কিংবদন্তির আসনে।

‘সাত নম্বর কয়েদি’র পর ওই বছরই তিনি আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন। সে বছরই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির মধ্য দিয়েই জন্ম হয় কিংবদন্তি উত্তম-সুচিত্রা জুটির। বাংলা ছবির রোমান্টিক মেলোড্রামার আইকনে পরিণত হওয়া এখন পর্যন্ত সর্বাধিক জনপ্রিয় এ জুটি বাংলা ছবিকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। উত্তম-সুচিত্রার একগাদা হিট ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘ওরা থাকে ওধারে’, ‘মরনের পরে’, ‘গৃহ প্রবেশ’, ‘শাপমোচন’, ‘হারানো সুর’, ‘সবার উপরে’, ‘সপ্তপদী’, ‘সাগরিকা’, ‘সাথীহারা’, ‘আলো আমার আলো’, ‘হার মানা হার’, ‘ইন্দ্রানী’ প্রভৃতি। এর মধ্যে ‘সপ্তপদী’ ছবিতে উত্তম-সুচিত্রার কালজয়ী অভিনয় আজও দর্শক ভোলেনি। বাংলা ছবির সর্বকালের অন্যতম সেরা রোমান্টিক ছবির তালিকায় ‘সপ্তপদী’র স্থান ওপরের দিকেই থাকবে।

সুচিত্রা যখন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিকাশ রায়, বসন্ত চৌধুরী, অশোক কুমারের সঙ্গে অভিনয় করেছেন তখনও দর্শক তাকে সমান আগ্রহে গ্রহণ করেছে। ‘সাত পাকে বাঁধা’ [১৯৬৩, সৌমিত্র], ‘উত্তর ফাল্গুনী] [১৯৬৩, বিকাশ], ‘দ্বীপ জ্বেলে যাই’ [১৯৫৯, বসন্ত], ‘হসপিটাল’ [১৯৬০, অশোক কুমার) ছবিগুলো তার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। দিলীপ কুমারের সঙ্গে ‘দেবদাস’ [হিন্দি, ১৯৫৫] চলচ্চিত্রের অভিনয় করেছেন পার্বতী চরিত্রে। সুচিত্রা সেনের শেষ মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ১৯৭৮ সালে পরিচালক মঙ্গল চক্রবর্তীর ‘প্রণয় পাশা’।

১৯৬৩ সালে অজয় করের ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে অনবদ্য অভিনয়ের জন্য মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। এটাই ভারতীয় কোনো চলচ্চিত্র শিল্পীর আন্তর্জাতিক আসরে পাওয়া প্রথম স্বীকৃতি। এছাড়া দীর্ঘ ২৫ বছরের অভিনয় জীবনে নানা পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।

সুচিত্রা সেনের নায়কেরা
১৯৫৩ সালে ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ছবিতে সুচিত্রার নায়ক ছিলেন সমর রায়। ব্যবসা সফল হয়নি সেই ছবি। সে বছরই কিন্তু ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ এবং ব্যাপক হিট। এর পরই উত্তম-সুচিত্রা জুটির উত্তম সময় শুরু হয়ে যায়। পাশাপাশি বসন্ত চৌধুরী, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বিকাশ রায়, রবীন মজুমদার, প্রশান্ত কুমার, অসিতবরণ, উৎপল দত্ত, রঞ্জিত মল্লিকের সঙ্গে একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন সুচিত্রা সেন। তবে তাঁদের কারো সঙ্গেই জুটি গড়ে ওঠেনি। যদিও সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবির জন্যই তিনি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পান। তবে জুটি বলতে একজনই, উত্তম কুমার।

এরপর বাংলা ছবির পাশাপাশি নাম লেখান বলিউডে। সুচিত্রা অভিনীত প্রথম হিন্দি ছবি ‘দেবদাস’ (১৯৫৫)। নায়ক দিলীপ কুমার। ছবিটি বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে। এরপর অশোক কুমার, দেবানন্দ, সঞ্জিব কুমার, ধর্মেন্দ্রর সঙ্গে কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন এই কিন্নরী। ১৯৭৪ সালে হিন্দি ছবি ‘আঁধি’তে একজন নেত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেন সুচিত্রা। বলা হয়, এ চরিত্রের প্রেরণা ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। এ ছবির জন্য ফিল্মফেয়ার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছিলেন সুচিত্রা। তাঁর স্বামী চরিত্রের জন্য সঞ্জিব কুমার পেয়েছিলেন শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই ছবিটি নিষিদ্ধ করা হয়। সৌন্দর্য আর অভিনয় গুণে ইচ্ছে করলেই বলিউড মাত করতে পারতেন সুচিত্রা। কিন্তু কেন বেশি ছবি করেননি তা জানা যায়নি।

প্রেমের সেরা জুটি উত্তম-সুচিত্রা
‘সাড়ে চুয়াত্তর’ দিয়ে উত্তম-সুচিত্রা জুটির ‘প্রেম’ শুরু। অথচ মজার ব্যাপার হলো, এ ছবিতে সুচিত্রা সেনের কাজ করারই কথা ছিল না। রমলা চরিত্রের জন্য আগে থেকেই মালা সিনহাকে ঠিক করে রেখেছিলেন পরিচালক নির্মল দে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়ান মালা সিনহা। বিপাকে পড়ে যান পরিচালক। কপাল খোলে উঠতি নায়িকা সুচিত্রা সেনের। ইন্ডাস্ট্রিতে তখন একেবারেই নতুন মুখ সুচিত্রা সেন। ঝুলিতে মাত্র দুটি ছবি, প্রথমটি আবার মুক্তিই পায়নি। ছবির সংখ্যার বিচারে উত্তম কুমারের অবস্থা সুচিত্রার চেয়ে ভালো, তবে দর্শকের মন পায়নি। তখন পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া ৯টি ছবির আটটিই সুপার-ডুপার ফ্লপ, একটির কাজ শেষই হয়নি, হিট মোটে একটি ছবি। ফলে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকবেন কি না তার অনেকটাই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’-এর সাফল্যের ওপর নির্ভরশীল। তবে ভরসার জায়গাও ছিলথতখন পর্যন্ত উত্তম কুমারের একমাত্র হিট ছবি ‘বসু পরিবার’-এরও পরিচালক ছিলেন এই নির্মল দে। আর ছিলেন তুলসী চক্রবর্তী, ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়, মলিনা দেবীর মতো অভিনেত্রী। ১৯৫৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পেল ‘সাড়ে চুয়াত্তর’।

জন্ম নিল বাংলা চলচ্চিত্রের সবচেয়ে সফল ও স্থায়ী এক জুটি। পূর্ববর্তী ছবিগুলোর ব্যর্থতার দায় আমার নাথনানাজনের কাছে বলা উত্তম কুমারের এই দাবির সত্যতাও প্রমাণ করল এ ছবির সাফল্য। উত্তম কুমার বরাবরই বলে আসছিলেন, নতুন যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নায়িকাও আনতে হবে নতুন। কিন্তু তাঁর বিপরীতে দেওয়া হচ্ছিল পুরনো নায়িকাদের। তাই ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ তাঁর জন্যও বড় ঘটনা। আসলেই ছবিটিতে সুচিত্রা সেনকে লুফে নিল দর্শক। তবে উত্তম-সুচিত্রার যে যুগল রূপ সাধারণ দর্শক সবচেয়ে বেশি পছন্দ করে, তার জন্য অপেক্ষা করতে হলো আরো দেড় বছর। ১৯৫৪ সালে মুক্তি পেল ‘অগ্নিপরীক্ষা’। জনপ্রিয়তার সব রেকর্ড ভেঙে দিল উত্তম-সুচিত্রার এই ছবি। তারপর আর পেছন ফেরার সময় মেলেনি। ‘সপ্তপদী’র সেই বিখ্যাত গানের মতোই মনে হচ্ছিল আসলেই বুঝি কোনো দিন শেষ হবে না এই পথ। তবে সব ভালোরই শেষ আছে, নইলে ভালো যে আর ভালো থাকে না। ‘৫৩-তে যে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘৭৫-এ ‘প্রিয় বান্ধবী’র মাধ্যমে তা শেষ হলো। পরে হয়তো আবার শুরু হতে পারত এ যাত্রা। কিন্তু তার আগেই চিরতরে বিদায় নিলেন উত্তম, অন্তরালে চলে গেলেন সুচিত্রা। ২২ বছরে মুক্তি পেয়েছে এ জুটির ২৯টি ছবি। তার মধ্যে আছে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’, ‘একটি রাত’, ‘হারানো সুর’, ‘সপ্তপদী’, ‘গৃহদাহ’, ‘কমললতা’র মতো ছবি।

চলচ্চিত্রে পরবর্তী প্রজন্ম
বিয়ের ১১ বছর পর তাঁর একমাত্র সন্তান মুনমুনেরর জন্ম। ছোটবেলায় বিখ্যাত চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের কাছে চিত্রকলায় হাতেখড়ি নেন মুনমুন। ১৯৭৮ সালে ত্রিপুরা রাজপরিবারের সদস্য ভারত দেব বর্মার সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৭৯ সালে রাইমা ও ১৯৮১ সালে রিয়া সেনের জন্ম হয়। রিয়ার জন্মের তিন বছর পর ‘আন্দার বাহার’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে অভিষেক হয় মুনমুনের। হিন্দি ছাড়াও বাংলা, তেলেগু, তামিল, মালায়ালাম, মারাঠি ও কন্নড়সহ সব মিলিয়ে ৬০টি ছবি ও প্রায় ৪০টি টিভি সিরিয়ালে অভিনয় করলেও মায়ের খ্যাতির ধারে কাছেও যেতে পারেননি।। মুনমুনের ছোট মেয়ে রিয়া চলচ্চিত্রে পা রাখেন ১৯৯১ সালে, শিশুশিল্পী হিসেবে। এর পর তামিল ছবিতে অভিনয় শুরু ১৯৯৯ সালে। ২০০১ সালে বলিউডে রিয়ার যাত্রা শুরু হলেও তেমন আলোড়ন তুলতে পারেননি। ‘গডমাদার’ ছবি দিয়ে বলিউডে অভিষেক হওয়া রাইমা প্রথম থেকেই প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। সুচিত্রার অভিনয় প্রতিভার উত্তরাধিকার বলতে গেলে রাইমাকেই ভাবা যেতে পারে।

পাবনার রমা দাশ
রমা দাশগুপ্ত কৃষ্ণা। জন্ম ৬ এপ্রিল ১৯৩১, পাবনার সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার সেনডাঙার জমিদারবাড়িতে। বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত, মা ইন্দিরা দাশগুপ্ত। বাবা ছিলেন দিলালপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে রমা তৃতীয়। দিলালপুর সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণী (অসমাপ্ত) পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বিয়ের পিঁড়িতে বসেছেন ষোলোতে, ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে। পাত্র ঢাকার, ব্যারিস্টার দিবানাথ সেন।

রমা দাশগুপ্ত নামে ১৯৫২ সালে করেন প্রথম ছবি ‘শেষ কোথায়’। আলোর মুখ দেখেনি এই ছবি। ১৯৫৩ সালে অভিনয় করেন ‘সাত নম্বর কয়েদী’ সিনেমায়। কথিত আছে, এই ছবির পরিচালক সুকুমার দাশগুপ্তই নাম বদলে রেখেছিলেন সুচিত্রা। দারুণ ফ্লপ করে ছবিটি। কিন্তু সে বছরই মুক্তি পায় উত্তম কুমারের বিপরীতে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’। ব্যবসাসফল এই ছবির পরের বছর ‘অগ্নিপরীক্ষা’ ছবিতে সুচিত্রা-উত্তম জুটি পোক্ত হয়ে যায়।

১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ ছবিতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের বিপরীতে অভিনয় করে কুড়িয়ে নেন মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরষ্কার। এ ছাড়া ঝুলিতে পোরেন অনেক পুরস্কার। শেষ অভিনয় করেন ১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিতে। তারপর তিনি স্বেচ্ছায় গৃহবন্দি জীবন শুরু করেন। ২৫ বছরের অভিনয়জীবনে ৬০টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এই মহানায়িকা।

শ্বশুরবাড়ি ঢাকার গেন্ডারিয়ায়
ঢাকার গেণ্ডারিয়ায় সুচিত্রার শ্বশুরবাড়িটির কোনো চিহ্নই এখন নেই। আছে বলতে শুধু তাঁর দাদাশ্বশুরের নামে দীননাথ সেন (১৮৪০-৯৮খ্রি.) রোড। সুচিত্রার সংসার জীবনের শুরুতে সেন পরিবারটি কলকাতার বালিগঞ্জে স্থায়ী হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ২৭ বিঘার বিশাল বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। ১৯৬৫ সালে শত্রুসম্পত্তি হিসেবে রেকর্ড হয়। পরে ব্যবহৃত হয় সরকারি অগ্নিনির্বাপণ কেন্দ্র হিসেবে।